বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বিশ্ব নবীর আগমনে, সুরভিত পরিবেশে পুলকিত বিশ্ব আজীবন সম্মাননা পেলেন জনাব ওসমান গণি ও শফিকুর রহমান মধু মিয়া বৃষ্টির ধারায় মুছে যাক “রোজা রাখি, আল্লাহর হুকুম পালন করি, নিজে সুস্থ থাকি অপরকে সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করি” মঙ্গলকাটা কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার ‘MCTC’র এক যুগ পূর্তিতে আনন্দ ভ্রমণ ফেনিবিল ও কোনাপাড়া সমাজকল্যাণ যুব সংঘের অমর একুশে উদযাপন ‘আব্দুল গণি ফাউন্ডেশন’ মেধাবৃত্তি পরিক্ষা-২২ এর বৃত্তি প্রাপ্তদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত নারায়ণতলা মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত সুনামগঞ্জের ডলুরা বর্ডারহাটে অনিয়ম ও মাদক বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত তৃতীয় বারের মত অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো দাখিল ২০০৪ ব্যাচ এর মিলনমেলা

জগতের আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ : পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ

জগতের আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ : পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ

মানুষের সাথে সম্পর্ক আজীবনের। শৈশবে পাড়ার, স্কুলের বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো, খেলা – গল্প। কিশোর বয়স থেকে সংগঠন। শহরের বিভিন্ন পাড়ার মাঠে খেলাধুলা। ছাত্র রাজনীতি দিয়ে ব্যাপক মানুষের সাথে আড্ডা। পাড়ার আড্ডা থেকে উকিলপাড়া, কলেজের পুকুরপাড়, হোস্টেলের আড্ডায় আড্ডায় মানুষের সাথে সখ্যতা। মিছিলে স্লোগান দেই, বক্তৃতা করি। রাজনীতি, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, খেলাধুলা সখ্যতায় ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে হল আর ক্যাম্পাস সখ্যতার জগৎ বিস্তৃত করেছে। গণরাজনীতি নিয়ে গেছে তৃণমূলের মানুষের কাছে।
আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে সবাই চেয়েছিলেন সুপ্রীম কোর্টে আইন পেশায় জড়িত হই। আমার মন পড়ে থাকত সুনামগঞ্জে। উকিলপাড়া, ট্রাফিক পয়েন্ট আমায় টানত। ফলে আমি আমার জন্মের শহরেই ফিরে গিয়েছিলাম। আপনজন অনেকে চাইতেন আমি যেন ঢাকায় ফিরে যাই। আইনজীবী সনদ থাকলেও কোর্টের চেয়ে উকিলপাড়ায় বন্ধুদের প্রাণখোলা তুমুল আড্ডা আমাকে টানত। মিছিল-মিটিং আদালতপাড়া থেকে সড়কে টেনে নিত। অকাল প্রয়াত পৌর চেয়ারম্যান কবি মউজদীন ভাইকে কেন্দ্র করে আরেক আড্ডার জগৎ ছিল আমাদের। ভাইয়েরা এবং আপনজন অনেকে চাইতেন আমি যেন সুপ্রীম কোর্টের আইনপেশায় চলে যাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার আইন বিভাগের আলোকিত সাথীরা হাইকোর্টের বিচারপতি হন, আমি গর্বিত হই। আমি আমার সুনামগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি। সমিতিতে আড্ডায় মিলিত হই। সিনিয়র আইজীবী আত্মীয় শহীদুজ্জামান চৌধুরীসহ অনেকে এ নিয়ে আক্ষেপ করতেন। প্রিয় সুনামগঞ্জ আমাকে টেনে রাখত।
সংসদ সদস্য হবার পরও আমার সন্তানরা সুনামগঞ্জের স্কুলেই পড়াশোনা করে। আমিও সুনামগঞ্জেই থাকি। সংসদ অধিবেশন এবং কাজ থাকলে ঢাকায় থাকি। কাজ শেষে ফিরে যাই আমার সুনামগঞ্জে।
আমাদের একান্নবর্তী পৈতৃক টিনের বাড়িতেই আমার আনন্দ। সকাল থেকে লোকজন ছুটে আসেন বাড়িতে। মানুষের জন্য উন্মুক্ত আমার বাড়িতে গ্রামের সাধারণ মানুষেরা বেশি আসেন। আমার কাছে আসতে তাদের কোন মাধ্যম লাগে না। কোন নেতাকে ভায়া ধরে আসতে হয় না। সরাসরি পুরুষ-মহিলারা আমার কাছে আসেন। কেউ কাজে আসেন। কেউ এমনিই আসেন। কথা বলতে আসেন। অনেকে বাড়ির উঠানে আড্ডার নেশায় আসেন। কতজনের কত গল্প। আবার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আসেন। কিছু মানুষ একান্তে নিজের কথা বলেন। কেউ সমাধান খোঁজেন। কেউ কথা বলে নিজেকে হাল্কা করেন।
কত মানুষ। কত কথা।
সবার কথা শুনি। অনেকের কথা আমাকে ভাবায়। আপাত দৃষ্টিতে যাকে জানি সুখী মানুষ, কথা বলার পর বুঝতে পারি তিনি ভাল নেই। সব আছে, কিন্তু সুখ নেই। আশ্চর্য হই! অবাক লাগে! অনেককে চিনি, যার সব আছে- সুখী না হবার কোন কারণ নেই; তিনিও দেখি সুখে নেই। আবার অনেক আসেন তেমন কিছু নেই। সুখ আছেন। সুখী মানুষ।
অনেক মানুষকে দেখি, শুধু অন্যকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তায় ডুবে থাকেন। যাকে আমরা বলি পরশ্রীকাতরতা। শুধু পরশ্রীকাতরতায় নিজেকে অসুখী বানিয়ে ফেলেছেন। এ এক আশ্চর্য বিষয়! নিজে সুখী হবার সকল অনুষঙ্গ আছে, শুধু অন্যের ভাল সহ্য করতে না পেরে নিজেই অসুখী হয়ে বসে আছেন, অথচ নিজেই সেটা জানেন না। এমন অদ্ভুত মানুষের সংখ্যা প্রচুর আমাদের চারপাশে। মানুষের সাথে সার্বক্ষণিক মেলামেশার সুবাদে অনেকের অনেক কিছু জানা হয়। এমন অনেক আশ্চর্য মানুষকে জানি যারা বেশি মানুষের সাথে মিশে না। নিজেকে গুটিয়ে রাখে। শুধু তার চারপাশের মানুষ যারা ভাল আছেন। তাদেরকে নিয়ে ভাবে। এদের খুত খোঁজে। সমালোচনা করে। শুধু মাত্র তার পরিচিত কিছু মানুষ ভাল থাকাকে সে মেনে নিতে পারে না। এটা করতে করতে সে অসুখী হয়ে বসে আছে। সেটা সে জানেই না।
এ নিয়েই হয়তো গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন, “চিন্তার প্রতিফলন ঘটে স্বভাব বা প্রকৃতিতে। যদি কেউ মন্দ অভিপ্রায় নিয়ে কথা বলে বা কাজ করে দুঃখ তাকে অনুগমন করে। আর কেউ যদি সুচিন্তা নিয়ে কথা বলে বা কাজ করে সুখ তাকে ছায়ার মত অনুসরণ করে।”
বলা হয় সুখ একটি মানবিক অনুভূতি। মনের এমন এক অবস্থা বা অনুভূতি যা ভালোবাসা, তৃপ্তি, আনন্দ বা উচ্ছ্বাস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সুখের সংজ্ঞা বা দর্শন মানুষের জৈবিক, মানসিক, মনস্তাত্ত্বিক, দর্শন এবং ধর্ম দিয়ে নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়েছে। মনোবিজ্ঞানীরা তাত্ত্বিক মডেলের ভিত্তিতে সুখ পরিমাপ করেন। এ মডেলে সুখ ইতিবাচক কর্ম ও আবেগের সমষ্টি। এ ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয় আনন্দ, অঙ্গীকার এবং অর্থ। গবেষকরা সুখের কিছু বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করেছেন, যা সুখের সাথে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। যেমন বহির্মুখী বা অন্তর্মুখী অবস্থা। স্বাস্থ্য, গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা, আশাবাদ এরকম কিছুকে। তারপরও বলা যায় সুখ আসলে আপেক্ষিক বিষয়।
আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন, “মানুষ যতটা সুখী হতে চায়, ততটাই হতে পারে। সুখের কোন পরিসীমা নেই। ইচ্ছে করলেই সুখকে আমরা আকাশ অভিসারী করে তুলতে পারি।”
দর্শনশাস্ত্র এবং ধর্মীয় চিন্তাবিদরা প্রায়ই আবেগের পরিবর্তে একটি ভালো জীবন বা সমৃদ্ধশালী জীবন ধারণের ক্ষেত্রকে সুখ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেন। এই অর্থে সুখকে বুঝার জন্য গ্রিক eudaimonia ব্যবহার করা হত। নৈতিকতার নীতিতে যা এখনও ব্যবহার করা হয়। সহস্রাব্দ ঘুরে অমর্ত্য সেনের মানবিক বিকাশের পদ্ধতিটি উন্নত হয়েছে। ফলে সুখের ক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ে আগ্রহ বেড়েছে। আবার ১৭৭৬ এ যুক্তরাষ্ট্রের থমাস জেফারসন লিখিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি ছিল মূলত রাজনৈতিক মূল্যবোধ। সেখানে আবার গুরুত্ব পেয়েছিল ‘সুখের অনুধাবন করা একটি সার্বজনীন অধিকার’ হিসাবে।
২০১২ সালে ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত কল্যাণমূলক পদক্ষেপে, প্রাথমিক বিশুদ্ধতম জীবনের মূল্যায়ন এবং মানবিক প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা। সুখকে উভয় জীবন মূল্যায়নে ব্যবহার করা হয়। যেমন মোটের উপর আপনি আপনার জীবনে কতটা সুখী এবং মানসিক প্রতিবেদনে এখন আপনি কতটা সুখী? গবেষণা প্রতিবেদনগুলো এই পরিমাপ পদ্ধতির মাধ্যমে সুখের সর্বোচ্চ স্তরের দেশগুলোকে চিহ্নিত করে। আবার গবেষণায় বলা হয়, সুখ ৫০ভাগ জিনগতভাবে নির্ধারিত হয়। এর ১০ভাগ চলমান জীবনের পরিস্থিতি এবং ৪০ভাগ সুখ আত্মনিয়ন্ত্রণের বিষয়।
জানি না রবীন্দ্রনাথ কেন বলেছিলেন “এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলে না, শুধু সুখ চলে যায়।”
তবে মোটা দাগে আমার মত সাধারণ মানুষ বুঝি যে, কারো ক্ষতি না করে নিজের ভাললাগা নিয়ে চলাতেই সুখ। যা আছে তার ভেতর আনন্দ খোঁজে পেতে হবে। তবেই জীবনে সুখ। এই যে, মানুষের পায়ে পায়ে হাঁটি। মানুষের সাথে চলি। আমার হাওরের শহরে পূর্ণিমা রাতে হেঁটে বেড়াই। নিঃস্বার্থ আড্ডায় ডুবে যাই। ছেলের সাথে ক্রিকেট খেলি। মেয়েকে এনে দেয়া বইয়ের গল্প শোনায় আগ্রহ নিয়ে, এটাই সুখ। তাই আমিও বলি “জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ।”
আসুন হিংসা-বিদ্বেষ বাদ দিয়ে সুখে থাকি। সুখের মধ্যে বসবাস করি।
[পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ : সংসদ সদস্য, সুনামগঞ্জ-৪ ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের হুইপ]


আপনার এ্যাড দিন

ফটো গ্যালালি

Islamic Vedio

বিজ্ঞাপন ভিডিও এ্যাড




© All rights reserved © 2018 angina24.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com